,

চট্টগ্রামের সেই মৌমিতা ও সুমিত গ্রেপ্তার!

নৃশংসতার চরম দৃষ্টান্ত এটি। এক সময় নিজের ভালোবাসায় বেঁধেছিলেন যে মানুষটিকে, সেই তমালের জীবন থেকে সমস্ত আলো কেড়ে নেওয়া, তার পরিবারকে পথে বসানোর মূল পরিকল্পপনাকারী মৌমিতা দত্ত এ্যানি (২৫) নামের মেয়েটি। এহেন অপকর্মে বাধা দানের পরিবর্তে বরং উৎসাহই দিয়ে গেছে মৌমিতা, এসিড আক্রান্ত তমাল যার প্রেমের আহবানে সাড়া দিয়ে জীবনের শ্রেষ্ঠ ভুলটা করেছিল। অবশেষে ঘটনার এক বছর পর সিএমপির গোয়েন্দা টিমের হাতে ধরা পড়তে হলো মৌমিতা ও তার স্বামী সুমিত দাশকে (৩২)। ৩০মার্চ শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঢাকার ভাটারা নতুন বাড়ি এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় মৌমিতা দম্পতিকে।
গত শনিবার দুপুরে দুই আসামিকে নিয়ে ডিবির টিম চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে পৌঁছে। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ পুলিশ কমিশনার হাসান মো. শওকত আলী জানান, এসিড নিক্ষেপে তমাল চন্দ্র দেকে ঝলসে দেয়ার পর সুমিত দাশ স্ত্রী মৌমিতাকে নিয়ে রাজধানীর ভাটারা এলাকায় আত্মগোপন করে। ফলে দীর্ঘদিন ধরে খোঁজ চালিয়েও পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করতে পারেনি। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টায় অভিযান চালিয়ে ভাটারা এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয় গোয়েন্দা পুলিশ। চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানাধীন গুডস হিলের সামনে ২০১৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি প্রেমঘটিত কারণে এসিড হামলার শিকার হন তমাল চন্দ্র দে।
তিনি পটিয়া উপজেলার কেলিশহর এলাকার বাবুল চন্দ্র দে’র ছেলে। এ ঘটনায় তমালের দুটি চোখ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। গ্রেপ্তার সুমিত ও মৌমিতাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন হেফাজতে চেয়ে আদালতে আবেদন করা হয়েছে। অভিযুক্ত মৌমিতা দত্ত অ্যানি ও তার স্বামী সুমিত দত্ত উভয়ই প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন।

স্নাতক পাস তমালের দূর সম্পর্কের আত্মীয় মৌমিতা। প্রহসনে প্রেম, ভয়াবহ পরিণতি- প্রেম কখনো মধুর, কখনো সে বেদনা বিধূর। কখনো হাসায়, কখনো কাঁদায়, কখনো সে দূর বহুদূর। তমাল ও মৌমিতার প্রেম এর কোন সংজ্ঞাতেই পড়ে না। তমালের বাবা বলেন, ঘটনার চার-পাঁচ মাস আগে চট্টগ্রামের গুডস হিল এলাকায় আমার বড়ো ভাইয়ের মেয়ের বিয়েতে তমালের সঙ্গে এনির পরিচয় হয়। তারা তিন-চার মাস একসঙ্গে ঘোরাফেরা করে। কিন্তু তারও পাঁচ বছর আগে থেকে আরেকজনের সঙ্গে মেয়েটির সম্পর্ক ছিল। এ নিয়ে তমালের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয়েছিল। তমাল রাগের মাথায় তাকে থাপ্পড়ও মেরেছিল। সেই থাপ্পড়ের জবাব তারা দিয়েছে এসিডে। তিনি বলেন, আমার ছেলের চোখ আর কোনো দিনও ভালো হবে না। আমার নিজের চোখ দিতে চেয়েছি, ডাক্তার বলেছেন সেই সুযোগ নেই। চোখের কলকব্জা সব পুড়ে গেছে। আমি চাই এসিড সন্ত্রাসীরা যতই বিত্তশালী হোক না কেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক সাজা হোক।
এসিড নিক্ষেপের ঘটনায় ২০১৭ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি তমালের মা বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মৌমিতা ফেসবুকের মাধ্যমে প্রেমের ফাঁদে ফেলে ডেকে নিয়ে তমালকে এসিড দিয়ে ঝলসে দিয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারের সদস্যদের। পরিবারের স্বপ্ন ছিল তমাল হাল ধরবে সংসারের- পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তমালের পিতা বাবুল চন্দ্র দে। তার স্বল্প আয়ে দুই ভাই বোন বেড়ে উঠছিল। তমালের স্বপ্ন ছিল বড় ব্যবসায়ী হবে। ফেঞ্জুগঞ্জ কলেজ থেকে অনার্স পাশ করার পর বাবার সরকারি চাকুরির সুবাদে পরিবারসহ চলে আসেন চট্টগ্রামে। সরকারী সিটি কলেজে মাস্টার্সে ভর্তি হন। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তার সব স্বপ্নই এখন চুরমার। নির্মমতার কাহিনী বলতে গিয়ে তমাল জানান, চার মাস পর হঠাৎ একদিন এ্যানি এসে জানায় সে এ সম্পর্কটা কন্টিনিউ করতে পারবে না। তমাল কারণ জানতে চায়। এক পর্যায়ে বলেই দেয় যে তার সাথে পাঁচবছর ধরে অন্য এক ছেলের রিলেশন আছে। শুধু তাই নয়, তারা কোর্ট ম্যারেজও সেরে রেখেছে । বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখায় ক্ষুব্ধ হয়ে তমাল তাকে একটি চড় মেরে সম্পর্ক ছিন্ন করেন। এ্যানি বিষয়টি তার স্বামী সুমিতকে অবহিত করে। সুমিত আরো কয়েকজন বন্ধুর সাথে যুক্তি করে তমালকে পৃথিবী থেকে বিদায় করে দেওয়ার পরিকল্পনা করে। এ্যানি আগে ভাগেই বিপদ আঁচ করেচিল। তার ভাবনায় ছিল এক ঢিলে দুই পাখি মারার। এই ঘটনার মাসখানেক পর প্রজাপতির ডানা নামে একটি ফেসবুক আইডি থেকে বন্ধু হবার আমন্ত্রণ পান তমাল। নিয়মিত কথাবার্তার এক পর্যায়ে ওই আইডি থেকে তমালকে দেখা করার অনুরোধ করা হয়। প্রেম করার মজা বুঝলো তমাল- তমাল জানান, ফেসবুকের মাধ্যমে এ্যানি পুনরায় যোগাযোগ করে। বলেন, ক’দিন আগে ইন্ডিয়া গিয়েছিল। সেখান থেকে তমালের জন্য উপহার এনেছে। সন্ধ্যা ছয়টার দিকে তমাল গুডস হিল এলাকায় পৌঁছে যায়। কিন্তু না,কেউ নেই নেখানে। মৌমিতাকে ফোন দেওয়ার চেষ্টাকালে দুজন সামনে ও বাকি দুজন পেছনে এসে দাঁড়ায়। হঠাৎ করে গরম কিছু একটা মুখে মেরে দেয়। আমি আর কিছু দেখতে পাইনা তখন। তমাল জানান, আমাকে ডেকে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে এসিড ছোড়া হয়েছিল। আমি দু’জনকে দেখেছিলাম। তারা অদ্ভুতভাবে আমার দিকে তাকিয়েছিল। এরপর আরেকজন যুবক গরম কিছু আমার মুখে নিক্ষেপ করে। ঝাপসা চোখে দেখেছিলাম পরনে চেক শার্ট, গড়ন এনির স্বামী সুমিতের মতো। আমি অসহ্য যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে যখন পানি পানি চিৎকার করছিলাম তখন একজন যুবক বলছিল, এ্যানির সাথে প্রেম করার মজা দেখ। লোকজন আসতে দেখে পালিয়ে যায় হামলাকারীরা। ডিবি পরিদর্শক রাজেশ জানান, ঘটনার পর সুমিত ও এ্যানি গ্রেফতার এড়াতে ঢাকায় চলে যান। সেখানে এ্যানি একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে শিক্ষকতা শুরু করেন। সুমিত কয়েকটি টিউশনি নেন। এভাবেই তাদের সংসার চলছিল। পুলিশের ধীরে চলো নীতির অভিযোগ- তমালের পিতা বাবুল চন্দ্র দে বলেন, গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি নগরীর কোতয়ালি থানার রহমতগঞ্জে গুডস হিলের পাশে তমালকে এসিড নিক্ষেপের ঘটনার পর ২৩ ফেব্রুয়ারি তিনি বাদি হয়ে এ্যানি ও তার স্বামী সুমিত দাশ এবং অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজনকে আসামি করে কোতোয়ালী থানায় মামলা দায়ের করেন। প্রথম অবস্থায় কোতয়ালী থানা পুলিশের ধীরে চলো নীতিতে মামলাটি চাপা পড়ে যাওয়ার উপক্রম হচ্ছিল। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শুধু বলছিলেন চেষ্টা করছি,আমরাতো বসে নেই। ছবি, ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার সবই দেওয়া হয়েছে। তবুও তাদের ধরে না। তাদের কথা শুনে মামলার ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আরো চিন্তায় পড়ে যাই। পরে আদালতের শরণাপন্ন হই এবং মামলাটি নগর গোয়েন্দা শাখায় পাঠানোর ব্যবস্থা করি। এরপর মামলা কিছুটা গতি ফিরে পায়। চোখের আলো নিভে গেল জীবনের মতো- দেশে ও ভারতে নিয়ে চেষ্টা করলেও রক্ষা করা যায়নি তমালের দুটি চোখ ও তার চেহারা। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, এসিডের কারণে তমালের দু’চোখই গলে গেছে। এখন আর দু’চোখে দেখার কোনো সম্ভাবনা নেই। একই সাথে পুরো মুখমন্ডলের চামড়াও ঝলসে গেছে। আমি একটি জিনিসই চাই, আমার লাইফ শেষ, জীবন শেষ। আমি চাই আমার সঙ্গে যে এমন কাজ করেছে তার যেন শাস্তি হয়। আর কোনো ভাইয়ের যেন জীবনটা এমনভাবে শেষ হয়ে না যায়। তমাল বলেন, আমি যদি কোনো অন্যায় করেই থাকতাম তাহলে দেশের আইনের মাধ্যমে তারা বিচার করতে পারত। কেন তারা আমার জীবনটাকে নষ্ট করে দিল?

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

সর্বশেষ আপডেট



সর্বাধিক পঠিত



সম্পাদক প্রকাশক ও মুদ্রাকর
মোল্লা হারুন উর রশীদ কর্তৃক মোল্লা হারুন প্রিন্টিং প্রেস, সরদার পাড়া মোগলবাসা রোড কুড়িগ্রাম থেকে মুদ্রিত ও সরদার পাড়া মোগলবাসা রোড, কুড়িগ্রাম থেকে প্রকাশিত। ,
সম্পাদক মোবাইল ০১৭১২৫৯৩৮১৩
নিউজ ইমেইল:cp24bd@gmail.com
সহ :সম্পাদক সম্পাদক শাহনাজ পারভীন
নির্বাহী সম্পাদক: রেদওয়ানুল হক দুলাল
মোবা: ০১৭১৫৩৮৫২৮৫
ব্যবস্থাপনা সম্পাদক: মোল্লা হোমায়রা তাবাসসুম হিমা
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়- ইউ.এ.প্লাজা, শাপলা চত্বর, কুড়িগ্রাম।

উপদেষ্টা সভাপতি আলহাজ্ব পনির উদ্দীন আহম্মেদ এমপি কুড়িগ্রাম ২ আসন।
উপদেষ্ঠা সম্পাদক- মো: জাফর আলী, জেলা পরিষদ চেয়্যারম্যান ও সাবেক ,এম পি ও সভাপতি
বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখা ।উপদেষ্ঠা- এ্যাডভোকেট এসএম আব্রাহাম লিংকন, উপদেষ্ঠা- এ্যাডভোকেট মুহা: ফখরুল ইসলাম, উপদেষ্ঠা- আব্দুল জলিল, মেয়র কুড়িগ্রাম পৌরসভা
উপদেষ্ঠা- সাঈদ হাসান লোবান,উপদেষ্ঠা- আমান উদ্দীন আহম্মেদ (মনজু) সাধারণ সম্পাদক বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ কুড়িগ্রাম জেলা শাখা ও সদর উপজেলা চেয়্যারম্যান , কাজিউল ইসলাম । আলহাজ্জ মোস্তাফিজুর রহমান (সাজু) ১ নং পৌর যুগ্ন সাধারন সম্পাদক,বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ পৌর শাখা ,কুড়িগ্রাম।

Design & Developed BY zahidit.com